করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কোথাও বেড়ানো হয়নি। সীমিত পরিসরে সবকিছু খুলে দেওয়ার পরই ভরা বর্ষায় কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে ঘুরে এলাম। দুই বন্ধু আজিজ ও সুমন কে নিয়ে ঢাকা থেকে যাচ্ছি। স্বভাবিক পরিবহনে গিয়ে ১ দিনেই কিভাবে সহজে ঘুরে আসাযায় সেই গল্পটিই আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।
উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর-মাছে ভরা – এটাই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচয় বহন করে। হাওরাঞ্চল হওয়ায় মাছ চাষই এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা। তারা সমন্বিত পদ্ধতিতে জলাশয়ে মাছের সঙ্গে হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এসব এলাকা চোখে পড়ে।
আবহমান বাংলার অন্যান্য গ্রামের মতোই সুন্দর কিশোরগঞ্জ। চারদিক গাছগাছালিতে ভরা। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নিকলী উপজেলা। দ্বীপের মতো ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের নাচন, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, রাতারগুলের মতো ছোট জলাবন ও হাওরের নানান স্বাদের মাছ। এসব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় নিকলীর অপরূপ হাওর ভ্রমণে।
দূর থেকে নিকলী দেখে মনে হচ্ছিল দিগন্তজোড়া আকাশ। চারদিকে থই থই জল যেন আকাশ ভিজিয়ে দিয়েছে। অথচ ভরা বর্ষা না থাকলে হাওরের মাঝ দিয়েই যাতায়াত করে লোকজন।
নিকলীর বেড়িবাঁধে পর্যটকদের কেন্দ্র করে ছোট-বড় দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ছোট ছোট নৌকার পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আছে। এগুলো ভাড়া নিয়ে হাওরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানো যায়। ছোট নৌকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা। বড় নৌকার ক্ষেত্রে গুনতে হবে ৭০০-৮০০ টাকা।
নৌকা ভাড়া নিয়ে দূরের উপজেলা বিশেষ করে অষ্টগ্রাম বা মিঠামইন যাওয়া যায়। এছাড়া নিকলী বেড়িবাঁধে রয়েছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। এসব বাহন ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করে আশেপাশে ঘোরা যায়।
দুপুরে হাওরের মাছ দিয়ে ভাত খেলাম। স্বাদ এখনও মুখে লেগে আছে। দাম তুলনামূলক সস্তা। এখানকার খাবারের হোটেলগুলো মাঝারি মানের। ১০০-১৫০ টাকায় খাওয়া যায় পুরো প্লেট।যদিও আমাদের কে মেহমানদারী করেছে আমাদের স্নেহের মামা ফায়সাল মামা ।
যাদের আতিথেয়তা আমরা সকলেই মুগ্ধ ।
পেটপূজার পর আমরা চললাম পাশেই নিকলী হাওরের আরেক অংশে। হাওরের দু’পাশের রাস্তা দেখার আনন্দ অন্যরকম। উভয় দিকে গৃহস্থ বাড়ি। গরু-ছাগল চরে বেড়ায়। ঝকঝকে আকাশের নিচে গ্রামীণ পথে হাঁটতে দারুণ লাগে। খড়ের গাদা ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।
হাওরের জলাশয়ে জাল দিয়ে ঘেরা নানান রঙের হাঁস। এগুলোকে রঙ করা হয়েছে। কার হাঁস কোনগুলো বা হারিয়ে না যাওয়ার জন্য এই পন্থা। মাছ ধরা যেহেতু এখানকার বাসিন্দাদের মূল পেশা, তাই পথে পথে দেখা যায় জাল বোনার দৃশ্য। জাল বুনতে বুনতে মাঝে মধ্যে উদাস চোখে তাকিয়ে থাকেন তারা।
বিকাল ফুরিয়ে এলে সূর্য দিগন্তে নামে। এমন দৃশ্য দেখার ইচ্ছে কখনও ফুরায় না। যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। কিন্তু সময় সীমিত। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে ফিরতি পথ ধরি। এখনও কানে বাজে হাওরের শোঁ শোঁ আওয়াজ।
আর হ্যা কুলিয়ার চর এ হাওরের তাজা মাছের নিলাম হয় প্রতিদিন বিকাল ৪ টার পর থেকে । আপনার যারা কুলিয়ার চর হয়ে যাতায়াত করবেন তারা আসার পথে তাজা স্বাদের মাছ অনেক কম দামে কিনে আনতে পারেন ।
👉আসুন জেনে নেই কিছু ইতিহাস
🌹👉 অষ্টগ্রাম– মিঠামইন হাওড়ঃ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এক লীলাভূমি কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চল। তন্মধ্যে অষ্টগ্রাম- মিঠামাইন হলো সকলের সেরা, এজন্যেই এই অঞ্চল কে বলা হয়ে থাকে ভাটির রানী। উপমহাদেশ এর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাম হলো অষ্টগ্রাম।
🌹👉৮ টি ছোট বড় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত অষ্টগ্রাম উপজেলা যাকে ঘিরে রেখেছে কালনী, ঘোড়াউত্রা, মেঘনা, ধলেশ্বরীর মতো ৪ টি বৃহত্তর নদী। ভৌগলিক অবস্থান এর দিক দিয়ে অষ্টগ্রামের উত্তরে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা, দক্ষিনে ব্রাম্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুর এবং পূর্বে হবিগঞ্জ এর লাখাই অবস্থিত।
🌹👉শুকনা মৌসুমে যেদিকেই চোখ যায় শুধু ক্ষেত আর ক্ষেত আর বর্ষা মৌসুমে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সেই ক্ষেত পানিতে পরিপূর্ন হয়ে মিঠা পানির সাগর এ পরিনত হয়। আর সেই সাগর এর মাঝখানে ছোট বড় গ্রাম গুলো পরিনত হয় একেকটি দ্বীপ এ।
🌹👉এই অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, তন্মধ্যে কুতুব শাহী মসজিদ, কাকুরিয়া সোয়াম্প ফরেস্ট, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সেতু, বাঙ্গালপাড়া – চাতলপাড় আবুরা সড়ক উল্লেখযোগ্য।
🌹👉বর্তমানে নব্য সংযোজন হয়েছে অষ্টগ্রাম – মিঠামইন- ইটনা আবুরা সড়ক যেটার কারনে অষ্টগ্রাম এখন পুরো দেশে পরিচিতি পেয়েছে। অষ্টগ্রামের কাস্তুল ইউনিয়ন এর হাওড় হতে সূর্যাস্ত দর্শন যেন কুয়াকাটা কেও হার মানায়।আর এই কাস্তুল এই সংগঠিত হয়েছিল ইঁশাখা ও মানসিংহের ঐতিহাসিক যুদ্ধ।
🌹👉যে সকল স্থান সমূহ আমার এই ট্রুরে দেখতে পেয়েছি এবং জেনেছি –
১/ বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চল।
২/ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সেতু।
৩/ অষ্টগ্রাম – মিঠামইন- ইটনা আবুরা সড়ক।
৪ /হাওড়ের মায়াবী আকাশ।
৫/রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের পৈত্রিক নিবাস
৬/ ইত্যাদির সম্প্রচারিত সেই স্কুল যাহা এই অঞ্চলের জন্য বিখ্যাত একটি স্কুল । পূর্ন হাওরে টলারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে ঐ স্কুলে যাতায়াত করে ।
৭/হাওড়ের পরিচ্ছন্ন পানিতে গোসলের আনন্দ ই আলাদা ।
৮/আসার সময়ে কুলিয়ারচর থেকে হাওড়ের থেকে সারদিনে জেলেদের সংগ্রহ করা জীবত বিভিন্ন উন্নতমানের মাছ ক্রয়ের সুযোগ ,সাধারনত সে সকল মাছ সমূহ ঢাকায় অনেক মূল্য ।
৯/অষ্টগ্রামে আয়োজিত ঐতিহাসিক ১০ ই মহরমের তাজিয়া মিছল । যাহা হাজির পীরের মাজারে গিয়ে সমাপ্ত হয়ে থাকে ।
১০/কুলিয়ারচর থেকে বির্স্তীন হাওড়ে স্প্রিড বোটের মাধ্যমে ১ঘন্টায় অষ্টগ্রামে যাওয়া আসার পথে নানা রকম স্যোর্ন্দয দেখার সুযোগ ।
১১/ অষ্টগ্রামের ঐতিহাসিক একটি মিষ্টির দোকান আছে। যাদের রসমালাই টি অনেক মজার।
যাতায়াতের তথ্য
বাসে ঢাকা থেকে যেতে হলে গুলিস্থান ফ্লাইভার (আসাদ পুলিশ বক্স ) থেকে তিশা সরাসরি কুলিয়ার চর যেতে হবে । ৩-৩:৩০ ঘন্টা সময় লাগে । ভাড়াও কম মাত্র ২০০ টাকা জনপ্রতি ।
কুলিয়ার চর থেকে টলার আছে ৪ ঘন্টা পরপর ছাড়ে অষ্টগ্রাম অথবা বাংগালবাড়ী ঘাটে যায় ।
তবে ট্রলারে সময় প্রয়োজন প্রায় ২:৩০ ঘন্টা সময় লাগে ।
আমরা স্প্রিড বোটে চড়ে রওয়ানা হলাম।যাহার ভাড়া জন প্রতি মাত্র ২৫০ টাকা আবার সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা ।
ঢাকা থেকে সায়েদাবাদের কাছে গোলাপবাগ মাঠ থেকে কিশোরগঞ্জের দিকে বাস ছাড়ে। এক্ষেত্রেও কটিয়াদি নেমে যেতে হবে।
বাস ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৮টায় ছাড়ে আন্তঃনগরট্রেন এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ। ট্রেনে গেলে কিশোরগঞ্জের আগে গচিহাটায় নেমে যেতে হবে।
লেখক : আব্দুস সালাম সনি ,সম্পাদক হজনিউজ.কম.বিডি
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143
Leave a Reply