রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসীদের নিয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলা – ২৪ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি, প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের বিরুদ্ধে মামলা হজ এজেন্সীদের কর্জে হাসানা পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আর্থিক লেনদেন হতে বিরত থাকার অনুরোধ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে যোগাযোগ করবেন যেখানে হাতছাড়া হবার আশঙ্কা কোরিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের ভিসা লাগবে না পাকিস্তানে যেতে ১৪০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি আনসারুল আলম চৌধুরী বিমানবন্দরে আটক স্বৈরাচারী হাসিনার আস্থাভাজন ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দারের অপসারণ দাবি বদলে গেছে বিমান বন্দর ২০২৫ সালের পবিত্র হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
নোটিশ :
প্রবাসীদের নিয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলা – ২৪ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি, প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের বিরুদ্ধে মামলা হজ এজেন্সীদের কর্জে হাসানা পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আর্থিক লেনদেন হতে বিরত থাকার অনুরোধ পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে যোগাযোগ করবেন যেখানে হাতছাড়া হবার আশঙ্কা কোরিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের ভিসা লাগবে না পাকিস্তানে যেতে ১৪০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি আনসারুল আলম চৌধুরী বিমানবন্দরে আটক স্বৈরাচারী হাসিনার আস্থাভাজন ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দারের অপসারণ দাবি বদলে গেছে বিমান বন্দর ২০২৫ সালের পবিত্র হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত

হজ পালন করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাফন-দাফনের কী হবে?

সানজানা চৌধুরী-বিবিসি নিউজ বাংলা
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৯ জুন, ২০২৪
হজ পালন করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাফন-দাফনের কী হবে?
হজ পালন করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তার কাফন-দাফনের কী হবে?

সৌদি আরবে চলতি বছরের হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তাদের মধ্যে ১৮ হন পুরুষ এবং তিন জন নারী। যাদের বয়স ৪৮ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশের হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বুলেটিন অনুযায়ী মক্কায় মারা গেছেন ১৬ জন, মদিনায় চার জন এবং মিনায় এক জন হজযাত্রী। এর মধ্যে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ১৭ জন এবং পরে চারজন মারা যান।

মক্কায় হজ করতে গিয়ে বাংলাদেশিসহ ৫৭০ জনেরও বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। যাদের অর্ধেকেরও বেশি মিশরীয় নাগরিক।

প্রতিবছর হজ করতে গিয়ে তীব্র গরমে, ভিড়ে পদদলিত হয়ে, অসুস্থ হয়ে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে মারা যান। এক্ষেত্রে পরবর্তী করণীয় কী?

তার মরদেহ দেশে আনা যাবে? নাকি সেখানেই দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হবে। লাশ সনাক্ত হবে কিভাবে ? মৃত্যু সনদ কাদের থেকে পাওয়া যাবে এমন নানা প্রশ্ন ওঠে।

তীব্র তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক হজযাত্রী।

ছবির ক্যাপশান,তীব্র তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক হজযাত্রী।

এক্ষেত্রে সৌদি আরবের হজ সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তার লাশ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। তার মরদেহ সৌদি আরবে দাফন করা হয়।

হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময়ে প্রত্যেক হজযাত্রী হজে যাওয়া সংক্রান্ত আবেদনপত্র পূরণ ও স্বাক্ষর করে থাকেন।

ওই আবেদনপত্রে তারা অঙ্গীকার করেন বা সম্মতি দেন, যদি সৌদি আরবের ভূমি বা আকাশে তার মৃত্যু হয় তবে সৌদি আরবে তাকে দাফন করা হবে। পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রহণ করা হবে না।

এক কথায়, মৃতের পরিবার হজযাত্রীর মরদেহ দেশে পাঠানো বা এই সংক্রান্ত কোন সুপারিশ সৌদি সরকারকে করতে পারবেন না। আর করলেও তা সৌদি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি হজযাত্রী যদি তার থাকার জায়গা বা রাস্তায় দুর্ঘটনায় অথবা হাসপাতাল থেকে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে সেই সংবাদ সবার আগে সৌদিতে বাংলাদেশের হজ মিশনকে জানাতে হয়।

আর হজ মিশনকে এই তথ্য জানিয়ে থাকেন মোনাজ্জেম বা মোয়াল্লেমরা। মোনাজ্জেম হলো হজ এজেন্সির পক্ষে দায়িত্বে থাকা গাইড। মোয়াল্লেম হলেন সৌদি আরবের গাইড। তার অধীনে একাধিক এজেন্সি থাকে।

মোনাজ্জেম বা মোয়াল্লেম মূলত দুই দেশের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সাধারণ মানুষও সরাসরি হজ মিশনকে এই তথ্য জানিয়ে থাকেন। নির্ভর করে ওই হজযাত্রী কোথায় মৃত্যুবরণ করেছে তার ওপর।

হজ পালনের মধ্যে  কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও হাসপাতালের পাঠানোর জন্য বিভিন্ন টিম কাজ করে।

ছবির ক্যাপশান,হজ পালনের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও হাসপাতালের পাঠানোর জন্য বিভিন্ন টিম কাজ করে।

সাধারণত হজযাত্রীর সাথে থাকা হাতের ব্যান্ড বা গলায় ঝোলানো আইডি থেকে তার নাম, বয়স, এজেন্সি, জাতীয়তা, সনাক্তকারী নম্বরসহ প্রাথমিক কিছু তথ্য পাওয়া যায়। হাতের ব্যান্ড স্ক্যান করলেও ওই হজযাত্রীর যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে জানা যায়।

বাংলাদেশের একটি নিবন্ধিত হজ এজেন্সির মোনাজ্জেম নাজমুস সাদাত এসব তথ্য জানিয়েছেন।

হজযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে প্রচুর কর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন তারা যদি কোন হজযাত্রীকে ভীষণ আহত বা মৃত অবস্থায় দেখতে পান তাহলে তারা তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন এবং হাতের ব্যান্ড স্ক্যান করে বা গলায় ঝোলানো আইডি থেকে তার তথ্য নিয়ে থাকেন।

হজযাত্রী যে দেশের নাগরিক তারা সরাসরি সেখানকার মিশনের সাথে যোগাযোগ করেন।

আবার হজযাত্রী যদি হজক্যাম্প বা হোটেলে মারা যান তাহলে তার মৃত্যুর খবর সবার আগে মোনাজ্জেম এবং তার থেকে মোয়াল্লেমরা জানতে পারেন।

পরে মোয়াল্লেম লাশ সনাক্ত করে বিষয়টি সৌদি আবরের বাংলদেশ হজ মিশন এবং সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করেন।

এরপর বাংলাদেশ হজ মিশন মৃতের ছবি ও প্রাথমিক তথ্যের সাথে তাদের কাছে থাকে তথ্য ও ছবি মিলিয়ে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

হজ মিশন বাংলাদেশে থাকা মৃতের পরিবারকে বিষয়টি অবহিত করেন।

আবার মৃত হজযাত্রীর সাথে যদি তার কোন আত্মীয়স্বজন বা কাছের কেউ থাকেন তারা মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করে থাকেন।

মৃতের পরিবার যদি সৌদি আরবে এসে শেষবারের মতো তাদের স্বজনকে দেখতে চান, সেই সুযোগ থাকে না।

তবে স্বজন যদি মক্কায় থাকেন তাহলে তিনি লাশ দেখার এবং জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান।

সনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত লাশ হিমঘরে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন মোনাজ্জেম নাজমুস সাদাত।

অসুস্থ হয যাত্রীলাশ পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর নিকটস্থ হাসপাতাল অথবা বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সার্টিফাইড চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করতে হয়। মোয়াল্লেম অফিসও ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস একটি ফরম পূরণ করে লিখিতভাবে জানায় যে মৃত হজযাত্রী তাদের নাগরিক।

এর ভিত্তিতে সৌদি সরকার ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃতু সনদ প্রস্তুত করে থাকে। সেই মৃত্যু সনদ প্রথমে সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ মিশন এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ হজ অফিসে পাঠানো হয়।

এরপর বাংলাদেশে থাকা স্বজনরা বাংলাদেশ হজ কার্যালয় থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সেইসাথে মৃতের সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট, মালপত্র, টাকা পয়সা সংগ্রহ করে থাকেন।

মূলত লাশের পরিচয় সনাক্ত ও মৃত্যু সনদ ইস্যু হওয়ার পর মরদেহের গোসল ও জানাজার কার্যক্রম শুরু হয়।

হজযাত্রী কোথায় মারা গিয়েছেন তার ওপর নির্ভর করে তার দাফন কাফন কোথায় হবে।হজযাত্রী যদি মক্কায় মারা যান তাহলে মক্কার রুশাইফায় লাশের গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

একইভাবে মদিনা ও জেদ্দায় মারা গেলে গোসল ও কাফনের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। হজ পালনকারীদের লাশ বহন করার জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকেই ফ্রিজার ভ্যানের ব্যবস্থা থাকে।

এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ বা মৃতের জন্মভূমির সরকারের কোনো খরচ করতে হয় না। কোন দায়িত্ব নিতে হয় না।

মক্কা, মিনা ও মুজদালিফায় অবস্থানরত কোনো হজযাত্রী মারা গেলে মসজিদুল হারাম বা কাবা শরিফে জানাজা হয়।

আর মদিনায় মারা গেলে মসজিদে নববীতে জানাজা হয়। এছাড়া জেদ্দা বা অন্য কোন স্থানে হাজীর মৃত্যু হলে সেখানকার স্থানীয় মসজিদে তার জানাজা হয়ে থাকে।

অসুস্থ হজযাত্রী।

মক্কায় জানাজার জন্য লাশ প্রথমে গাড়িতে করে কাবা শরিফের দক্ষিণে বাবে ইসমাইলের কাছে রাখা হয়।

মসজিদের ইমাম প্রতি ওয়াক্তে ফরজ নামাজের পর জানাজার নামাজের ঘোষণা দেন। ঘোষণায় জানিয়ে দেয়া হয় এখানে কয়জনের জানাজা পড়া হবে। তারমধ্যে পুরুষ, নারী বা শিশু কতজন সেটাও জানানো হয়।

মক্কায় সাধারণত লাশ রাখার স্থানে এসে জানাজার নামাজ পড়ান ইমাম। অনেক সময় কাবা শরিফের দক্ষিণে মাতাফ সংলগ্ন তুর্কি হারাম থেকেই জানাজার নামাজ পড়ানো হয়।

বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ধর্ম তত্ত্ববিদ ড. ওলিউর রহমান খান জানিয়েছেন, মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীতে প্রায় প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর এক বা একাধিক জানাজার নামাজ হয়ে থাকে। একে ফরজে কেফায়া বলা হয়।

হজযাত্রীদের জানাজা এই দুই মসজিদেই হয়ে থাকে। নির্ভর করে তিনি কোন শহরে মারা গিয়েছেন।

যদি দুই শহরের মধ্যবর্তী কোথাও মারা যান তাহলে পরিবারের সম্মতি নেয়া হয় লাশ মদিনায় দাফন হবে নাকি মক্কায়।

জানাজা শেষে মক্কার শারায়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে কাবা শরিফের সন্নিকটে জান্নাতুল মোয়াল্লাতে দাফন করা হতো।

যারা মদিনায় মারা যান তাদেরকে মসজিদে নববি সংলগ্ন বাকিউল গারকাদে বা জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।

জান্নাতুল বাকি কবরস্থান।

ছবির ক্যাপশান,জান্নাতুল বাকি কবরস্থান।

অন্যদিকে যারা জেদ্দা বা অন্য কোন শহরে মারা যান তাদের গোসল, কাফন ও জানাজা জেদ্দায় হয়ে। দাফনও সম্পন্ন হয় জেদ্দার স্থানীয় কবরস্থানে।

তবে পরিবার যদি চান তাহলে তাদের মক্কা বা মদিনার কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।

কবর যেখানেই হোক সেখানে হজযাত্রীর নাম পরিচয় সংক্রান্ত কোন ফলক কবরস্থানে থাকে না। এখানে কবর বাঁধানো বা কবর কিনে রাখার কোন নিয়ম নেই।

মূলত এই কবরস্থানে লাশগুলো বিভিন্ন চেম্বারে থাকে। একটি চেম্বারে থরে থরে কয়েকজনকে কবর দেয়া হয়।

কোন হজযাত্রী কতো নম্বর কবরে আছেন সেখানে কবরস্থানের রেজিস্ট্রেশন খাতায় নথিভুক্ত থাকে। যেন মৃতের স্বজনরা কবর জিয়ারত করতে চাইলে নির্দিষ্ট কবরটি সনাক্ত করতে পারে।

কোনো হজযাত্রী মারা গেলে লাশ গোসল করানো, কাফন পরানো, জানাজা পড়ানো, দাফন করাসহ প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পালন করে সৌদি সরকার।

এর জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্টও বেশ তৎপর ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায় মনে করে হজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা সৌভাগ্যের বিষয়। একে তারা বিশেষ মর্যাদার বলে মনে করে।

এজন্য এখন পর্যন্ত কোন হজযাত্রীর পরিবারকে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করতে দেখা যায়নি।

আমাদের সোস্যাল মিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর