হজ ও ওমরাহ যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা বা তার অর্থ আত্মসাৎ করলে তা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি কোনো এজেন্সি যদি হজযাত্রী বা ওমরাহ পালনকারীকে অঙ্গীকার মোতাবেক সেবা দিতে ব্যর্থ হয় বা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তাহলে তা অনিয়ম বা অসদাচরণ বলে ধরা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করাসহ হজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা এবং ওমরাহর জন্য ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো এজেন্সি পরপর পাঁচ বছর হজ ও ওমরার কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হলে তার লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। উল্লেখিত বিধান রেখে ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২০’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মু. আ. হামিদ জমাদ্দার যুগান্তরকে বলেন, ‘স্টেকহোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। তারা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ২০১২ সালে হজ আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও তা অনুমোদন পায়নি। আইনটি সংশোধন করে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু গত ৭ বছরেও সেটি সংশোধন করা হয়নি। ফলে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির ওপর ভিত্তি করে চলছে হজের কার্যক্রম। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি আবারও আইনের খসড়াটি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পরে নভেম্বরে খসড়া চূড়ান্ত করে স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এরপর প্রয়াত ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়।
প্রস্তাবিত আইনে হজের জন্য আলাদা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হজ ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি এবং ধর্মমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে হজ ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটি গঠন, বিমানের পাশাপাশি সমুদ্রপথেও হজযাত্রী প্রেরণ, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিমান সংস্থা নিয়োগ এবং হজের মতো ওমরাহ পালনের জন্য প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিধান রাখা হয়েছে। হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা, হয়রানির কারণে কোনো এজেন্সি পরপর দুই বার তিরস্কৃত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তার লাইসেন্স স্থগিত হবে। প্রতিটি লাইসেন্সের মেয়াদ হবে তিন বছর। হজ এজেন্সির লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে তিন বছর এবং ওমরাহর লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে দুই বছর ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান হজ ও ওমরাহ নীতিমালার প্রায় সব বিধিবিধান আইনে রয়েছে। আইন না থাকার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকে হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করছে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেকে আদালতে যাচ্ছে। আইন থাকলে এজেন্সির প্রতারণাগুলো যেমন কমে আসবে আবার আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে অনিয়ম দূর হবে। হজ প্রশাসনিক বা সহায়ক দলে কে বা কারা থাকবে তা নির্ধারিত হবে এই আইনে। যার অধীনে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো থাকবে হজ অফিসের। এতে করে হাজীদের সুবিধা আরও বাড়বে।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবিত হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইনের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত মতামত দেইনি। হজ ব্যবস্থাপনার মূল কাজটি তো হজ এজেন্সিই করে থাকে। তাই আইনের ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই মতামত আছে। প্রস্তাবিত আইনটি আমরা এখনও খতিয়ে দেখিনি। তবে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে হাব আইনের ব্যাপারে মতামত দেবে।’
‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২০’ শিরোনামের প্রস্তাবিত আইনটিতে মোট ৩১টি ধারা রয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, হজ ও ওমরাহযাত্রী এবং হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে। প্রস্তাবিত আইনে হজ অফিসকে ‘হজ অধিদফতর’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অধিদফতরের অধীনে একাধিক আঞ্চলিক হজ অফিস পরিচালিত হবে। এতে বলা হয়েছে, হজ অধিদফতর আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আকাশপথে অথবা সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হজ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় হজযাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এয়ারলাইন্স বা সমুদ্রগামী জাহাজ ভাড়া করবে।
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143
Leave a Reply