‘একটি নামকরা হজ এজেন্সির ম্যানেজার ছিলাম। মোটা বেতনের চাকরি। স্বপ্নেও ভাবিনি, এমন দুঃসময় জীবনে আসবে। চাকরি নেই। পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ভাবছি, আমিও গ্রামে গিয়ে কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করব।’ করোনার ভয়াল থাবায় হজ এজেন্সির ব্যবসায়িক কার্যক্রম কতটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে- তাই ফুটে উঠেছে ম্যানেজারের বক্তব্যে।
হজের আয় থেকেই এজেন্সিগুলোর পুরো বছরের খয়খরচা উঠে আসে। রমজানে ওমরাহ থেকেও টুকটাক আয় হয়। কিন্তু এ বছর তো কিছুই হল না। আগামী বছরের হজ ছাড়া উপার্জনের আর কোনো উপায় নেই।
হাজী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি হেদায়াতুল্লাহ হাদি বলেন, ‘অনেকেরই অল্পবিস্তর আয়-রোজগার হচ্ছে। আমরা পুরোপুরি শূন্য। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী হজ পর্যন্ত।
এত দীর্ঘ সময় উপার্জনহীন থেকে সংসার চালানোই তো মুশকিল। প্রতিষ্ঠান চালাব কীভাবে?’
প্রতিটি হজ এজেন্সির সঙ্গে কমপক্ষে দশ থেকে পনেরোজন লোক সরাসরি জড়িত থাকে। একটি এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পনেরোটি পরিবার পথে বসে যাওয়া। তবুও কিছু করার নেই। প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা।
দীর্ঘদিন সুখে-দুঃখে যে কর্মীরা পাশে ছিল তাদের না করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কোনো কোনো মালিক। মিডওয়ে এভিয়েশন হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী গোলাম কবির বলেন, ‘এখন আমারই পথে বসার পালা।
কর্মচারীদের পাওনা বুঝিয়ে বিদায় করে দিয়েছি। কয়েকজন কর্মী বারো বছর ধরে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের বিদায় করতে গিয়ে মনে হল, আপন ভাইকে গভীর সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছি’।
ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলো প্রণোদনা পাচ্ছে না। এজেন্সির লাইসেন্স জমা রেখে নাকি ঋণ দেয়ার নিয়ম নেই।
এদিকে এজেন্সি মালিকরা বলছেন, ব্যাংক চাইলে লাইসেন্স জমা রেখেও প্রণোদনা দিতে পারে। শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলে দিলেই হয়। এজেন্সি মালিকরা বলেন, আমাদের এখন চরম দুঃসময়।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী মরহুম শেখ আবদুল্লাহ থাকলে আমাদের দুঃখ অনেকটাই কেটে যেত। তিনি যেভাবেই হোক আমাদের জন্য অন্তত খেয়েপরে বাঁচার একটি ব্যবস্থা করতেন।
এম. সেতারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী বলেন, ‘এজেন্সি মালিকদের বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হল- বিনা সুদে প্রণোদনা অথবা এজেন্সির জামানতের অর্থ থেকে অর্ধেক পরিমাণ ঋণ কিংবা মন্ত্রণালয়ে হাজীদের গ্যারান্টি মানি বাবদ প্রতিটি এজেন্সি ভালো পরিমাণ টাকা পাওনা আছে সে টাকাগুলো দেয়া হোক।
এ তিন দাবির কোনো একটিও যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে এজেন্সিগুলো কষ্টে-সৃষ্টে টিকে থাকতে পারবে।’
এ বিষয়ে কথা হয় হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থেই এজেন্সিগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। ইতোমধ্যে বহু এজেন্সির মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কোনো ব্যবস্থা না হলে আগামী হজ পর্যন্ত দেখা যাবে হাতেগোনা কয়েকটি এজেন্সি আছে মাত্র। তখন এত বিশাল সংখ্যক হাজী সামাল দেয়া সম্ভব হবে না’।
এজেন্সির লাইসেন্স জমা রেখে প্রণোদনা দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে হাবের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, ‘আপনি ফোন করার একটু আগেই ধর্ম সচিব এবং অন্যদের সঙ্গে ভিডিও কলে মিটিং করছিলাম।
প্রণোদনা পাওয়াটা এজেন্সি মালিকদের অধিকার। আসলে ব্যাংকগুলো কাকে ঋণ দেবে, কাকে দেবে না- এটি যথাযথ তদারকি হচ্ছে না। আমরা কাজ করছি। আশা করি, সুন্দর ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
হাজীদের গ্যারান্টি মানি এবং জামানতের অর্থ থেকে ঋণের বিষয়ে হাব সভাপতি বলেন, ‘এজেন্সিগুলোর এ দুঃসময়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে যে কতটা প্রয়োজন- তা সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
প্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় গ্যারান্টি মানি ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কাজ এগিয়ে রেখেছিলেন শেখ আবদুল্লাহ। আর জামানতের অর্থ থেকে ঋণের বিষয়ে আমি এবং ধর্ম সচিব আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ধর্ম সচিব মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘শেখ আবদুল্লাহ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আসার পর থেকেই হজ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল। হাজীদের ভোগান্তি কমেছিল। এখন যে সংকট চলছে, এজেন্সিদের দুর্দিন কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
সব ধরনের কাগজপত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। আশা করি, গ্যারান্টি মানি এবং জামানতের অর্থ থেকে ঋণের বিষয়টি পাস হয়ে আসবে। তবে একটি মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম মন্ত্রী থাকলে যত সহজ এবং দ্রুত হয় মন্ত্রী না থাকলে একটু ধীর হওয়া স্বাভাবিক। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্ট করছি।’
লেখক: সাংবাদিক,আল ফাতাহ মামুন
Email: alfatahmamun@gmail.com
তথ্য সূত্র : দৈনিক যুগান্তর
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/hajjncomewsbd/public_html/wp-includes/functions.php on line 5143
Leave a Reply