চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজারে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে স্থাপন, ৬টি বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন।
দেশের ৮ বাণিজ্যিক বিমানবন্দরের উন্নয়নে সরকার প্রায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে এবং এই নতুন সুবিধাগুলো চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও বেশি।
চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজারে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে স্থাপন, ৬টি বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন।
এসব কার্যক্রমের ফলে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে সেবার মানোন্নয়ন ও উড়োজাহাজ ও যাত্রীধারণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ মুহূর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর যাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং অন্যান্য সেবার নিম্নমান নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১৫টি প্রকল্পের আওতায় ৮ বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, যা ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ব্যয়ের ৭০ শতাংশ অর্থায়ন করছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুট রানওয়েতে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে যুক্ত করা আরেকটি বড় প্রকল্প। কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরটি বোয়িং ৭৭৭ এর মতো উড়োজাহাজের উড্ডয়ন-অবতরণ পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করবে।
মফিদুর রহমান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন, সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে এবং বেবিচকের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ কমপক্ষে ৭টি প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ক্রমবর্ধমান ফ্লাইটের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমানবন্দরগুলোতে সক্ষমতা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখে। আন্তর্জাতিক রুটে এই সংখ্যা ১১ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৬ লাখ।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশের এভিয়েশন খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ।
নজরুল ইসলাম আশাবাদ প্রকাশ করেন, আগামী ১৫ বছরের মাঝে এই খাত আরও ৩ গুণ বাড়বে।
দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রানওয়ের উন্নয়ন নিশ্চিতভাবে বড় উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়নে সহায়তা করবে এবং বৃহত্তর টার্মিনাল ভবন যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেবে।’
তবে একইসঙ্গে বেবিচকের উচিত হবে অ্যাপ্রোচ লাইট সিস্টেম ও ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা, যাতে কিছু বিমানবন্দরে রাতে ও ভিজিবিলিটি কম থাকার সময়ে উড়োজাহাজ অবতরণ সুবিধাজনক হয়’ যোগ করেন তিনি।
তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম সংযুক্ত করার কাজ চলছে উল্লেখ করে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান জানান, তিনি অক্টোবরে এই বর্ধিত সেবার সফট লঞ্চ করার প্রত্যাশা করছেন।
এতে যাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে নির্মিত এই টার্মিনালে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি ডিপারচার ও ৬৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ২৭টি লাগেজ স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি ক্যারোসেল থাকবে।
৬৩ হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে নতুন আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও, ৩৭টি বিমানের জন্য ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার অ্যাপ্রোন এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখা যাবে এরকম একটি পার্কিং স্পেসও নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও, তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ২ লাখ ২০ হাজার টন থেকে ৭ লাখ টনে উন্নীত হবে উল্লেখ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম হবে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়েগুলোর ভারবহন ক্ষমতার উন্নয়ন করা হবে, যাতে বড় উড়োজাহাজগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় যাত্রী নিয়ে সিলেটে অবতরণ করতে পারে।
এছাড়াও, সরকার ও বেবিচকের যৌথ অর্থায়নে এ বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়াতে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার ৯১৯ বর্গমিটার টার্মিনাল, ৬ হাজার ৮৯২ বর্গমিটার কার্গো কমপ্লেক্স, ১টি নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার, ১টি ফায়ার স্টেশন, ১টি রক্ষণাবেক্ষণ ভবন এবং ১টি গাড়ি পার্কিং স্পেস নির্মাণ করা হবে।
তবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, নকশায় ত্রুটির কারণে এ প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর জানান, ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের শেষ নাগাদ তা শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে সম্প্রসারণের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। আধুনিকায়ন শেষে এই টার্মিনালের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩১০ জন থেকে বেড়ে ৬৭০ হবে।
এছাড়াও, কিছু অটোমেশন সুবিধাসহ একটি কার্গো ভবন, অ্যাপ্রোনসহ অপারেশন ভবন, ট্যাক্সিওয়ে ও ১টি নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।
৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। রানওয়ের প্রস্থ ১০০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৫০ ফুট করা হচ্ছে।
৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে বিমানবন্দরটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৬০ থেকে বেড়ে ৮৫০ হবে।
যশোর টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে যাত্রী সক্ষমতা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে। এ প্রকল্পের ৯৯ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এছাড়াও, যশোর, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন সহজ করতে ৫৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান